জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রী
মূর্তি ও ভাস্কর্য বিষয়ক জটিলতা

আমীন আল রশিদ : এই ইস্যু নিয়ে ফেসবুকে কিছু লেখা বিপজ্জনক। কারণ কে কোন বাক্যের কী অর্থ করে মুরতাদ বানিয়ে কল্লা ফেলে দেয়ার ফতোয়া দেন, সেটা এক বিপদ। কিন্তু মনে হলো একটু বলি।
একটা পক্ষ খুব সোচ্চার এটা প্রমাণ করতে যে, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়। অবশ্যই এক নয়। মূর্তি নির্মাণের উদ্দেশ্য ধর্মীয়, কিন্তু ভাস্কর্যের উদ্দেশ্য শিল্প। আবার এখন মূর্তি নির্মাণের সঙ্গে শিল্পও যুক্ত হয়েছে। কারণ কোন মন্দিরের প্রতিমা কত সুন্দর, কত বড়–সেটিও প্রতি বছর দূর্গাপুজার সময় আলোচনায় থাকে। এর সঙ্গে সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তিরও বিষয় থাকে। এখানে উৎসবেরও ব্যাপার থাকে।
পক্ষান্তরে বিখ্যাত মানুষের ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য থাকে না। কিন্তু মানুষের ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থাকাও অস্বাভাবিক নয়। উদ্দেশ্য এবং অনুপ্রেরণায় তফাৎ আছে।
যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হলেই সেটি ইসলামিক রাষ্ট্র হয় না এবং সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র নয় এবং এখানে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে এবং রাষ্ট্র সব ধর্মের মানুষের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে দায়বদ্ধ—সুতরাং এখানে মূর্তি পুজাও অবৈধ বা বেআইনি নয়। যারা মূর্তি পুজা করছেন, এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার।
সুতরাং কেন এবং কী উদ্দেশ্যে এটি বলা হচ্ছে যে, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়? অবশ্যই এক নয়। কিন্তু এটি ঘটা করে বলার মধ্য দিয়ে আমরা কি মূর্তি ও ভাস্কর্যকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছি না। এর মধ্য দিয়ে আমরা কি এটি প্রমাণ করছি না যে, ভাস্কর্য ভালো আর মূর্তি খারাপ?
যিনি মূর্তি পুজা করেন, এটি তার বিশ্বাস। অতএব আপনি যখন বলেন মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়, তখন এতে মনে হয় যে, মূর্তি ভাঙলে ক্ষতি নেই। এই ধরনের আলোচনা বিপজ্জনক এবং কোনো রাষ্ট্রে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি বাধা সৃষ্টি করে।
লেখক : সাংবাদিক