জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রী
অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২০” খসড়া চুড়ান্ত

প্রতিদিন ডেস্ক : বাংলাদেশ আগামী বছর থেকে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ যুক্ত গাড়ি বাজারে আনতে চায়। তবে মোটরগাড়ি শিল্প দাঁড় করাতে দরকার নির্দিষ্ট নীতিমালা যে অনুযায়ী দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই খাতে বিনিয়োগ করতে চায়।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বারবার বলা হচ্ছিলো একটি নীতিমালা প্রস্তুতের কাজ চলছে এবং যা অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে যাচ্ছে। নীতিমালাটি এখন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলেই আমরা বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পকে বাস্তবিকভাবে দেখতে পারবো। তো বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কি কি থাকছে এই নীতিমালায় তা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বাস্তবিকভাবে আমার কাছে একটি যুগোপযোগী নীতিমালাই মনে হয়েছে।
➡ বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে লাভের পুরো অংশই স্থানান্তরের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সুতরাং,কোনো বিনিয়োগকারী চাইলেই শতভাগ লভ্যাংশের টাকা নিজদেশে স্থানান্তর করতে পারবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী কোনোপ্রকার বাধার সম্মুখীন হবে না। বেশ ভালো উদ্যোগ।
➡যে সকল কোম্পানি CKD(Completely Knock Down) অটোমোবাইল এবং locally ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি করার জন্য ক্যাপিটাল ম্যাশিনারিসহ অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে শতভাগ শুল্ক ছাড় পাবে।
➡Light Manufacturing Industry যারা গাড়ির ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করবে তাদেরকে ৭-৮ বছর কর-অবকাশ বা tax-holiday দেয়া হবে।
➡বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের বাৎসরিক আয়ের ১% রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে(R&D) ব্যয় করে তাহলে তারা আমদানি শুল্ক এবং বাৎসরিক করের ওপর ছাড় পাবে।
➡অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ তৈরিতে একটি ‘উন্নয়ন তহবিল’ গঠিত হবে এবং উক্ত তহবিলের অর্থ সেসকল যন্ত্রাংশ তৈরিতে নিয়োজিত কোম্পানিদের পেছনে ব্যয় হবে।
➡বিদ্যমান অটোমোবাইলের জন্য আমদানিকৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হবে এবং যথারীতি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির ওপর কর মওকুফ করা হবে।
➡২০২১ সাল থেকে আগামী ১০ বছরে ৩০-৫০% বাস, ট্রাক, অটোরিকশা ইত্যাদি যানবাহন দেশেই উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশীয় এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশি কোম্পানি এগিয়ে এসেছে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রি জাপানের মিতশুবিশি কর্পোরেশনের সহায়তায় বাংলাদেশে গাড়ি নির্মাণ করবে এছাড়াও জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ইতোমধ্যেই বলেছেন যে জাপানের কোম্পানি টয়োটা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নির্মিত জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন করবে। রাষ্ট্রদূত এই খসড়া নীতিমালাকে সময়োপযোগী নীতি হিসেবে সুপারিশ করেছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে জাপানের এই দেশে অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগের দারুণ আগ্রহ রয়েছে। বলে রাখা ভালো উক্ত নীতিমালা তৈরিতে জাপান শিল্প মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছে।
দেশীয় কোম্পানি BAIL(Bangladesh Auto Industry Limited) প্রাথমিকভাবে মিরসরাইয়ে ১০০ একর জমির ওপর কারখানা স্থাপন করবে যেখানে কোম্পানিটি শুরুর দিকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে যা ৫ বছরের মধ্যে ১ বিলিয়ন অতিক্রম করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানিটি টু হুইলার, থ্রি হুইলার, সেডান, হেচব্যাক, SUV করবে। এছাড়া তাদের বিভিন্ন আকারের পিক-আপ ও অন্যান্য মাল্টিপারপাস যানবাহন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অনুযায়ী বাংলাদেশ অটোমোবাইল খাতের ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে এবং যা ১৫ লক্ষ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের বাজার ২০১৯ সালে ১৪০০ কোটিতে দাড়িয়েছে যা ১০ বছর আগে ছিলো মাত্র ৫০০ কোটি টাকা!
বাংলাদেশের নতুন এই নীতিমালা দেখে বোঝাই যাচ্ছে এই শিল্পের বাজার সবার জন্য উম্মুক্ত হবে মানে খুবই বিনিয়োগ বান্ধব হবে। আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে জাপানি, চীনা এবং দেশীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যদিও ভারতীয় কিছু কোম্পানি এখানে আসবে কিন্তু চীনা বা জাপানি কোয়ালিটির কাছে তারা কিভাবে সারভাইভ করবে সেটাই দেখার বিষয়! সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয় যেখানে বাংলাদেশিরা গর্বের সাথে দেশীয় গাড়ি ব্যবহার করবে।
তথ্যসূত্রঃ দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড