জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রী
তুর্কি বিরোধী সৌদি জোটে রাশিয়া!

নবাব আব্দুর রহিম : মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন তুরস্ক। এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন তুরস্ককে আটকাতে তাই সবকটি ফ্রন্টেই বিরোধিতা করছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর। দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হলেও ইদানিং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি সামনে আসছে।
এর অন্যতম একটি কারণ আরবের স্বৈরশাসকদের প্রতি ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রহ। এক দশক আগে আরব বসন্তে যখন বারাক ওবামার সরকার আন্দোলনকে মৌন সমর্থন দিয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছিল, তখন আরবে চেপে থাকা এসব জগদ্দল পাথরের পক্ষ নেয় রাশিয়া। যেমনটা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের ভূমিকা।
এর ফলশ্রুতিতেই সিরিয়ায় আসাদের পক্ষে সেনা পাঠায় রাশিয়া। মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাতেও সমর্থন দেয় দেশটি। পরবর্তীতে লিবিয়ার হাফতার বাহিনীর সমর্থনে ভাড়াটিয়া সৈন্যও প্রেরণ করে। সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর অভিযানকে সমর্থন জানালেও অন্য বিষয়গুলোতে রাশিয়ার সহযাত্রী আমিরাত।
একইভাবে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে রাশিয়া হুথি বিদ্রোহীদের পক্ষে লড়লেও পরে আমিরাত সমর্থিত যোদ্ধাদের প্রতি ঝুঁকেছে। এসব কারণে দেশটির প্রতি বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে এগিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর। আর এতে যে সৌদি সমর্থন রয়েছে তা নির্দ্বিধায় বলা সম্ভব।
মার্কিনীদের মিত্রদেশ হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, বিষয়টা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি আগের মত বিদ্বেষপরায়ণ হননি। ফলে তুরস্ককে ঠেকানোর স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতে রাশিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে মিশর-আমিরাত।
এর সর্বশেষ নজির দেখা গেছে সুদানে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে সুদানের সঙ্গে যেমন মধ্যস্ততা করেছে আমিরাত, তেমনই সুদানের লোহিত সাগর উপকূলে রাশিয়ার নৌঘাঁটি স্থাপনেও মধ্যস্ততা করেছে দেশটি। এর আগে ২০১৮ সালে মস্কো সফর করেন আমিরাতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। ২০১৩ সালের পর সেটি কোন আমিরাতি কর্মকর্তার ৭ম মস্কো সফর।
সুদানে নৌঘাঁটির ফলে সোমালিয়ায় তুর্কির অবস্থান কিছুটা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। এটি মিশর-আমিরাতের পরিকল্পনা হলেও অনেকেই ভাবতে পারেন মস্কো এমনটা করবে না; কেননা এরদোয়ানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে পুতিনের। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে স্বার্থের বাইরে দুইজনের মধ্যে অন্য কোন সম্পর্ক নেই। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উভয় দেশেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈরিতা রয়েছে। লিবিয়া, সিরিয়া, নাগর্নো-কারাবাখ ও ক্রিমিয়া ইস্যুর কোথাও কোথাও দুই দেশ একেবারে মুখোমুখি।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাশিয়া ট্রাম্পযুগের মত ছাড় পাবে না তা নিশ্চিত। অনেক বিশ্লেষকের ধারণা- বাইডেন যদিও এরদোয়ানের বিরুদ্ধে নানা হম্বিতম্বি করেছে, তবুও রাশিয়ার বিপরীতে তুরস্ক তার কৌশলগত মিত্র হতে পারে।
কিন্তু আরেকটি বিষয় হচ্ছে- বাইডেনের জয়ের পর বন্ধু রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার সঙ্গে বর্তমান সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ফলে তুর্কিবিরোধী সৌদি-মিশর-আমিরাত অক্ষে রাশিয়ার উপস্থিতি দেখা গেলেও সম্পূর্ণ বিষয়টি খুবই জটিলতাপূর্ণ।
তুরস্ক ও রাশিয়া দুই বন্ধুভাবাপন্ন দেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক কী হবে সেটা হয়তো বাইডেনের নীতির উপর নির্ভর করছে।