জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রী
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি : কেন এমন হয়

আলোর নিচেই যেমন থাকে অন্ধকার, তেমনি ঈদের আনন্দের সঙ্গেও বুঝি থাকে আসা-যাওয়ার ভোগান্তি। অন্তত আমাদের দেশে এটাই “নিয়ম” হয়ে গেছে।
পত্রিকার পাতা খুললেই কিংবা টেলিভিশনের বাটন টিপলেই শেকড়মুখী মানুষের দুর্ভোগের খবর পড়ে বা দেখে মনটা তেতো হয়ে ওঠে। “মহাসড়কে মহাদুর্ভোগ” “ট্রেনের বিলম্বিত যাত্রা” জাতীয় শিরোনাম যেন আমাদের উৎসবের অনুষঙ্গ হয়ে গেছে।
কিন্তু এমন কি হওয়ার কথা? কেন এমন হয়?
কেন এমন হয় – এ প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ নয়। আবার মোটা দাগে এর কারণ খুঁজে পাওয়াও কঠিন নয়। যেমন একটি পত্রিকা লিখেছে, “ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বের হবার বড় পথ আমিনবাজার হয়ে সাভার। তবে পথে পথে রাস্তায় ইউটার্নের সুযোগ গাড়ির গতি কমিয়ে সৃষ্টি করে জটলা। জায়গায় জায়গায় স্পিডব্রেকার থাকলেও দূর থেকে বোঝার উপায় নেই।”
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, “সাভার বাজারে শহরতলীর বাসের তোয়াক্কাহীন এলোপাথাড়ি স্টপেজ যানজটের বড় কারণ।… আশুলিয়া, বাইপাইল ও চন্দ্রায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। …উত্তরের ১৬ জেলায় যাওয়ার একমাত্র পথ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এই পথে দূরপাল্লার সাথে আছে স্বল্প পাল্লার বাস চলাচলও। এছাড়া এই মহাসড়কেই চলছে চার লেন ও সংস্কার কাজ। আর একাজই এখন বিশৃঙ্খল পরিবহণ ব্যবস্থার কারণ বলে মনে করছেন যাত্রী ও চালকরা।”
একই অবস্থা সব সড়ক-মহাসড়ক এবং নৌযাত্রীদেরও। বিস্তারিত উল্লেখ বাহুল্যমাত্র। তবে এই সংক্ষিপ্ততম আলোচনায় আমরা “কেন এমন হয়” – এ প্রশ্নের জবাব কিছুটা হলেও পেয়ে গেছি। জেনেছি, অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ, বাসের এলোপাথাড়ি স্টপেজ, কোথাও রাস্তায় ইউটার্নের সুযোগ, কোথাও স্পিডব্রেকার থাকলেও দূর থেকে বোঝা না যাওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার – মোটা দাগে এগুলো কয়েকটি কারণ।
এসব কারণ দূরীভূত করা হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব কি? ধরা যাক, অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপের কথা। ঈদ আমাদের অন্যতম জাতীয় উৎসব। নগরবাসী কর্মজীবী মানুষ বছরের এই সময়টাতে ক’টামাত্র দিন ছুটি পায় আর সেই সুযোগে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটতে চায় গাঁয়ের পথে; স্বজন সান্নিধ্যে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ক’দিন ছুটি পায় মানুষ? ঈদের ছুটি তিন দিন আর কোনো কোনো বছর ভাগ্যক্রমে তার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হলে মোট পাঁচ দিন। এই ক’টা দিন ছুটির একটি মুহূর্তও যাতে “বৃথা” না যায়, সেজন্যই মানুষের যত ছোটাছুটি আর তাতেই সড়কপথে, নৌপথে, আকাশপথে লেগে যায় যতো জট।
তাই আমাদের মনে হয়, ঈদের ছুটি আরো বাড়ানো দরকার। একটু বেশি ছুটি পেলে মানুষের তাড়াহুড়াটা একটু কমবে, তাতে রাস্তায় যানজট, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ইত্যাদিও কমে আসারই কথা। এবছর কিছুদিন আগে পত্রপত্রিকায় খবরও বের হয় যে, সরকার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে ছুটি বাড়ানোর কথা ভাবছে। কিন্তু কী কারণে জানি না, বিষয়টি আবার চাপা পড়ে যায়। আমরা মনে করি, আগামী ঈদুল আজহার আগেই এ বিষয়ে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসা গেলে তা সবার জন্যই কল্যাণকর হবে।
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি আছে, এটা যেমন সত্য, তেমনি তা অতীতের তুলনায় অনেক কমেছে – এটাও সত্য। পত্রপত্রিকার পাতাতেই তার সাক্ষ্য মেলে। তবে আমরা চাই, সড়ক-সেতু নির্মাণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে নীরব বিপ্লব এসেছে, তার হাত ধরে ”ঈদযাত্রায় ভোগান্তি” কথাটি চিরতরে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাক।
আমরা সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় রইলাম।