জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রী
ঝুঁকিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটের ৬ কিলোমিটার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : দেশের অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বড় অংশের অভ্যন্তরীণ রুটও এটি। যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের উন্নয়নকল্পে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ডাবল রেললাইন চালু হয়েছে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে যাতায়াত সময় কমেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই রুটের ৬ কিলোমিটার রেললাইন।
গত ২৫ মে টানা বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মিরসরাইয়ের কাছে একটি সেতুর নিচে মাটি ধসে যায়। ওই দিন চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ প্রায় ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ওই সময়ে উভয় পথে আটকা পড়েছিল প্রায় ১২টি ট্রেন; ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে অতি বৃষ্টির ফলে মিরসরাইয়ের মাস্তান নগর-চিনকি আস্তানা সেকশনের ৬ কিলোমিটার এলাকায় কয়েকটি রেলওয়ে সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেগুলোর নিচের নরম মাটি বৃষ্টির পানির চাপে সরে গেছে। এতে রেললাইনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ওই দিন প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা ত্রুটি সারাতে না পারায় ডাউন লাইন চালুর মাধ্যমে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ঝুঁকি এড়াতে ওই লাইনের অনুমোদিত গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। নতুন ডাবল লাইনে ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের নিয়ম থাকলেও দুর্বল লাইনের কারণে ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ গতি ১০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার পর কয়েকদিন মিরসরাইয়ের মাস্তান নগর-চিনকি আস্তানা সেকশনের ছয় কিলোমিটার এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চলেছিল। বৃষ্টির পানির চাপে কয়েকটি রেলওয়ে সেতুর ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। এখন স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চলছে।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাস্তান নগর-চিনকি আস্তানা সেকশনের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের নিচের অনেক মাটি সরে গেছে। রেলওয়ে সেতুর নিচের সরে যাওয়া মাটিও এখন পর্যন্ত প্রতিস্থাপন করা হয়নি। আর ওই ৬ কিলোমিটার এলাকায় ঝুঁকি নিয়েই স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে চলছে ট্রেন।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও টানা বর্ষণের পর রেললাইন থেকে দ্রুত পানি সরে যেতো। কিন্তু মিরসরাই, সীতাকুণ্ড এলাকায় রেললাইনের পাশে বিভিন্ন বড় শিল্প গ্রুপের স্থাপনা তৈরির পর রেললাইনের পানি সহজে সরছে না। এতে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় রেললাইনের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে রেললাইনের ক্ষতি হচ্ছে; সেইসঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ছে।
তারা বলেন, রেললাইনের পানি দ্রুত নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবং রেললাইনের সংস্কার না করলে আসন্ন বর্ষায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন সেকশনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, বর্ষা ও যেকোনো দুর্যোগের আগে পরিবহন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকৌশল বিভাগকে রেলপথ মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এই বছর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইন মেরামত করেনি প্রকৌশল বিভাগ। ফলে কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই ঝুঁকিতে পড়েছে রেলপথ। আসন্ন বর্ষার বৃষ্টিতে এই ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। তবে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ সতর্ক অবস্থানে আছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে মিরসরাই এলাকায় রেললাইনে পানি জমে যাওয়ায় ওই সময় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দ্রুত রেলপথ সংস্কারের ব্যবস্থা করায় বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিছু এলাকায় গতি কমিয়ে ট্রেন চলছে- এটা সঠিক তথ্য নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনের স্বাভাবিক গতি ৭৫ কিলোমিটার। তবে বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি এড়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চলে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে রেললাইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। সেই চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখছি না।