জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রী
শ্বেতার জন্য ভালবাসা

সিদ্ধার্থশঙ্কর ধর :
শ্বেতা আমার কাছে মণি। আমি ওকে মণি নামে জানি। ও কবি। কবি ও কবিতা নিয়েই ওর সাথে আমার যত ঠুনকো ঝগড়া ছিল। ও কিছুতেই বুঝতে চাইতো না সাহিত্যের সিরিয়াসনেসটা কী? কিন্তু ওর হাতেই যে সেই কলম, যার নীব থেকে নেমে আসবে সে চিঠি পাঠকের উদ্দেশ্যে- যাকে বলি জীবন, বিশেষ কিছু সত্য। যেহেতু জীবন একটি ক্ষেত্রবিশেষই শুধু নয়, বিশেষ ক্ষেত্রও বটে, এবং এটা ওর আছে, ছিল ওর দেখার চোখ, বোঝার ভিন্নতাও। সবসময়ই খুব সামান্যে হলেও নতুন কিছু ধরে আনছিল, উঠে আসছিল সেই শিশির যা যে কোনও শ্রাবণেই ¯িœগ্ধ- সাহিত্যের সৃষ্টি ও সৌন্দর্য তো তাই-ই। অপ্রয়োজনীয় ব্যাকরণে কি শিল্প সৃষ্টি হয়। ওর বেঁচে থাকাটা খুব দরকার। বিশেষভাবে দরকার, যা আগে কেউ বুঝতে পেরেছিল কিনা, জানি না। কবি বিষয়টি সহজ শব্দ নয়। কবি জন্মে। কবি হয়ে গড়ে ওঠার উদাহরণে আমি বিশ্বাসী না।
সীমাহীন সহ্যশক্তি আর ধৈর্য নিয়ে একেকটি দিন পার করাটাই তার অভ্যাস। এর জন্য ওর বিশেষ কোনও প্রস্তুতি কখনো ছিল না। তখন চিরকিশোরী স্বভাবের একহারা চেহারার শ্বেতার সময়টা কাটে কেবল বন্ধুদের নিয়ে, গল্পে আর আড্ডায়। এর বাইরে আর কোনও কিছুই সে বুঝতে চায়নি, অথবা এসবে তার সময় হয়নি, অথবা ছিল না তার অনাবশ্যক আগ্রহ। আর কেনইবা তাকে সবকিছু ও সবাইকে জটিল-জঞ্জালের সমীকরণে প্রতিপাদিত করে বুঝতে ও জানতে হবে। সে তো যোদ্ধা, শৈশব থেকে পুরো জীবনটাকে হাতের মুঠোয় করে বিপরীত ও কঠোর কুরুচিপূর্ণ বাস্তবতার প্রতিকূলে সুনির্দিষ্ট বোঝাপড়া নিয়ে হাঁটিহাঁটি পা পা করে স্কুলফেরা বাড়ির পথ ছেড়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতকোত্তরপর্বও শেষ হল কিছুদিন আগে। সৌন্দর্য আর শুচিতার প্রশ্নে কিছুতেই আপস করতো না, ঠিক যতক্ষণ তার সীমাবদ্ধ পকেটের সামান্য পূঁজি কড়া শাসনে চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ-রাঙানি না দিত। তাই বলে কারও প্রতি তার বিশেষ কোনও আব্দার ও ক্ষোভ ছিল না তার। ছিল কিছু তার কিশোরীসুলভ খেয়ালিপনা আর প্রিয় মানুষদের প্রতি একরাশ চাপা অভিমান। কষ্ট কী জিনিস, অভাব কাকে বলেÑ তাকে তা মর্মে মর্মে অনুবাদ করে দেখতে হয়েছে। বিধাতার নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন পর্যায়- তার স্পষ্ট চিহ্নগুলো যে অনৈতিক ছাপচিত্র তার জীবনে এঁকে গেছে, তা তার উদাহরণ ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিনীত দ্বিধা এনে দেয় মনে।
কাসের বাইরের বইপড়ার প্রতিও এত ঝোঁক তাকে কিছু সময় ব্যাথা ভুলে বেখেয়ালী করে রাখে, যা আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। তার একটা প্রিয় ছবি কাঁধে একটা বইয়ের ব্যাগ, যা তার সবসময়ই প্রিয়। শেষ হল তার সে সময়টাও একসময়। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব। যখন একটি স্বাভাবিক কোনও কর্ম-জীবনের দরজায় প্রবেশ করবে। শরীর যেন বলল তাকে, আর আমি পারছি না, বন্ধু! অনেক তো ঘুরলে একা একা অথবা বলল, দাঁড়াও- এবার আমাকে সময় দাও!
জীবন-অভিজ্ঞতাগুলোর লাইনগুলো তার কেবলই তার কবিতার খাতায় রেখায় রেখায় আঁকা। তার খুঁজে ফেরা মর্মরতার মধ্যে সে এক আশ্চর্যরকম ¯িœগ্ধতা। সে চেয়েছে আনন্দ, সে খুঁজেছে বৃষ্টি। চিরচাঞ্চল্যের দিনগুলো কেটেছে বাসা-বিদ্যালয় আর হাসপাতালে, আর তার সাথে কবিতা। আর কোনও কিছুতেই তার বিশেষ বোঝাপড়াটা ছিল না। অনেকেই তাকে ভুল বুঝেছে কখনও কখনও কিন্তু অকারণে। কারণ মানুষের ভেতরে ব্যাথার একটা ভাষা আছে যা অনেক মানুষ বুঝতে চায় না। কিন্তু এক আশ্চর্যরকম শিশুময়তা জুড়ে তার কী এক দারুণ একাগ্র মন্ময়তা, যারা তাকে দেখেছে, চিনেছে, কথা বলেছে, তারা জানে।
কবি হয় সন্ন্যাসী আর কবিতা হয় রাজসিক। কবি ও কবিতাকে যারা ভালবাসেন। আমি তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করব, আমি ও আমরা যারা তরুণ কবি অকাতরে যারা বিষয়ী হিসেবের বাইরে এসে প্রায়-যৌবনটাই একরকম সপে দিয়েছি এই কবিতার খাতায়, তাদের প্রতি সদয় হয়ে আপনারা যে বা যারা শিল্পের প্রতি মূল্যবোধ সম্পন্ন রুচিশীল বিবেকবান ও সামর্থ্যবান তারা শ্বেতা শতাব্দী এষের চিকিৎসায় এগিয়ে এলে গর্ববোধ করব।